থানা গঠন
ব্রিটিশ সরকার প্রশাসনিক প্রয়োজনে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নালিতাবাড়ী থানাকে দু’টি থানায় বিভক্ত করার লক্ষ্যে ১৯২২ সালের ১২ নভেম্বর নালিতাবাড়ী থানার দক্ষিণাঞ্চলের ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করে নকলা থানা। ইউনিয়নগুলো হলো-গনপদ্দী, নকলা,উরফা, কুর্শা বাদাগৈড়(বর্তমানে গৌড়দ্বার) , বানেশ্বর্দী, পাঠাকাটা, টালকী, চর অষ্টধর এবং চন্দ্রকোনা।
উপজেলা গঠনঃ
নকলা থানাটি (বর্তমানে উপজেলা) ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারীতে স্থাপিত শেরপুর জেলার অন্তর্গত হয়।
সাবেক কুর্শা বাদাগৈড় ইউনিয়নের ইশিবপুর মৌজায় নকলা উপজেলা সদর অবস্থিত। তবে আসল নকলা হল এ উপজেলার ২ নং নকলা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি উপজেলাসদর থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই ইউনিয়নের একটি মৌজার নাম নকলা। মৌজাটির পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদী। এই নদীর পূর্ব তীরে নকলা মৌজায় অবস্থিত শিববাড়ি বাজার। ব্রিটিশ আমলে এ বাজারটি বেশ জমজমাট ছিল। সেকালে এখানে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল। শিববাড়ি নাম থেকেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
কালক্রমে শিবাড়ী বাজারের প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহিরাগত ব্যবসাযী ও প্রভাবশালী মহর শিববাড়ি বাজার থেকে বেরিয়ে এসে ইশিবপুর মৌজায় অবস্থিত বর্তমান নকলা বাজারের গোড়া পত্তন করেন। পূর্বে এর নাম ছিল গোপালগঞ্জ। উপজেলা সদরের এই বাজারটি (বর্তমানে পৌর শহর) সুবর্ণ খালী নদীর তীরে অবস্থিত।
নামকরণ
নকলা” নামটি এসেছে আরবী ‘নাখলা’ শব্দ থেকে। নাখলা শব্দের অর্থ খেজুরের বাগান। এই আরবী শব্দটি থেকে অনুমিত হয়, এটি একটি প্রাচীন জনপদ।
ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
এ অঞ্চলটিতে হিন্দুদের আধিক্য ছিল। পরবর্তীতে তারা স্থানান্তরিত হয়েছে অথবা প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে গেছে। বলাবাহুল্য, নকলা থানা স্থাপনের পূর্বে প্রসিদ্ধ ব্যবসায় কেন্দ্র ও নৌ বন্দর চন্দ্রকোনাকে থানা করার পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশ সরকারের। কারণ, চন্দ্রকোনায় ছিল মহারাজ শশীকান্ত চৌধুরী ও জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর দুটি কাচারী। যেখানে প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করা হতো। ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন বিদ্যাপিঠ চন্দ্রকোনা রাজলক্ষী উচ্চ বিদ্যালয়, সূর্যবালা দেবী হাসপাতাল, পোস্ট অফিস এবং বড় বড় পাঠ ক্রয় কেন্দ্রসহ শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রাণ কেন্দ্র ছিল চন্দ্রকোনা।
ব্রহ্মপুত্র, দশানি আর মৃগী অববাহিকায় চন্দ্রকোনা নৌ বন্দর থেকে কলকাতা ও বিলেতে ডান্ডির সাথে সরাসরি নৌ যোগাযোগ ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আন্দামান ফেরত বিপ্লবী নগেন্দ্র চন্দ্র মোদক, বিপ্লবী যোগেশ চন্দ্রকর্মকার এবং বিপ্লবী মন্মথ দে চন্দ্রকোনায় জন্মেছিলেন।
মোঘল আমলে নকলা উপজেলার নারায়নখোলা গ্রামে সেনা ছাউনী ছিল। ব্রিটিশ আমলে পাঠাকাটা ইউনিয়নে ছিল নীল কুঠি। তবে এর সামান্যতম অস্তিত্বও এখন আর অবশিষ্ট নেই, অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্ব নেই অন্য কোনা প্রাচীন নিদর্শনেরও।
ভৌগলিক পরিচিতিঃ
অবস্থান: ২৪ ডিগ্রী ৫৩’ থেকে ২৫ ডিগ্রী ০২’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০ ডিগ্রী ০৭’ থেকে ৯০ ডিগ্রী ১৫’ পুর্ব দ্রাঘিমাংশ।
সীমানা: উত্তরে নালিতাবাড়ী উপজেলা, পূর্বে ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলা, দক্ষিনে জামালপুর সদর এবং ময়মনসিংহ কোতয়ালী উপজেলা,পশ্চিমে শেরপুর সদর উপজেলা।
এক নজরে নকলা উপজেলাঃ
ইউনিয়ন সমূহঃ
গনপদ্দী, নকলা, উরফা, গৌড়দ্বার , বানেশ্বর্দী, পাঠাকাটা, টালকী, চর অষ্টধর এবং চন্দ্রকোনা।
ভাষা ও সংস্কৃতি
নকলা উপজেলার মানূষ সাধারণত আঞ্চলিক কথ্য ভাষার সাথে শুদ্ধ বাংলা ভাষার সংমিশ্রণে কথা বলে। তবে কোন কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তেলেগু,নাগরী অচিক, বুজপুরী ভাষায় কথা বলে।
নকলায় অনেক কৃতি সন্তানের জন্ম হয়েছে। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় যাদের নাম প্রাতঃস্মরণীয় তাদের মাঝে দৈনিক সংবাদের প্রয়াত সম্পাদক বজলুর রহমান, কবিও গীতিকার শহীদুল হক, ঔপন্যাসিক , চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা আজম ফারুক, জিলবাংলা সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট তালাত মাহমুদ, কবি শাহজাদী আঞ্জুমান্দ আরা মুক্তি এবং সঙ্গীতে ফেরদৌস পারভীন ও অধ্যক্ষ শহীদুল আলমের নাম উল্লেখযোগ্য।
স্থানীয় ভাবে অকাল প্রায়ত কবি, গল্পকার ও সাংবাদিকি কামরুজ্জামান মুকুল, মজিবর রহমান, এমদাদুল হক রিপন, শ্যামল বণিক অঞ্জন ও শিশু ছড়াকার হোসনে তানসেন মাহমুদ ইলহামের নাম উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নকলায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপক প্রচলন লক্ষনীয়।বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সাহিত্য সংকলন প্রকাশ হয়ে থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিউদ্যোগে বেশকিছু পাঠাগার গড়ে উঠেছে। নকলায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের একটি শাখা রয়েছে।
বিনোদন উৎসব সংক্রান্ত তথ্যাদি
চড়ক মেলা :হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের চড়ক পূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ৩০ চৈত্র মাসে চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। লোক মুখে শোনা যায় বহু আগে থেকেই এই মেলার গনপদ্দী পোদ্দার বাড়ীর নিকটে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত চড়ক মেলা উপলক্ষ্যে লোকজন রঙ বেরঙ্গের নানা রকম দ্রব্য সামগ্রীর পসড়া সাজিয়ে বসে। চড়ক গাছের তৈরী নাগর দোলা এই মেলার অন্যমত প্রধান আকর্ষণ। উক্ত মেলা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অায়োজন হলেও মুসলমানসহ সব সম্প্রদায়ের লোকজন উক্ত মেলায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে সমগ্র এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতা দিবস মেলা :বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিবস ২৬ মার্চের দিন গনপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দিন ব্যাপী স্বাধীনতা দিবস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। লোক মুখে শোনা যায় অনেক অগে থেকেই উক্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে লাঠি বাড়ি খেলা, সাইকেল দৌড়, ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে ব্যপক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
নদ-নদী
নকলা উপজেলার কূল ঘেঁষে দুটি নদী বয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা হিসাবে উত্তর পাশ দিয়ে মৃগী নদী বয়ে গেছে আর দক্ষিণ পাশ দিয়ে ইছামতী নদী বয়ে।
এছাড়া ও কুর্শা বিল, বড়বিলা বিল ও বাইরকান্দি বিল উল্লেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান
১. রুনিগাও গাজীর দরগাহ
২. নারায়নখোলা বের শিমুল গাছ
তথসূত্রঃ
জাতীয় তথ্য বাতায়ন, উইকিপিডিয়া।