শেরপুর জেলার ভৌগলিক পরিচিতি

ভৌগলিক পরিচিতি
ভৌগোলিক সীমানা

উত্তরে মেঘালয়, দক্ষিন ও পশ্চিমে জামালপুর জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ জেলা অবস্থিত । শেরপুর জেলা পূর্ব পশ্চিমে ৮৯০- ৫০´পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৯০০- ১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত এবং  উত্তর দক্ষিণে ২৪০- ৫৫´উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫০- ১৬´ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

একদা শেরপুরের উত্তর ও উত্তর-পূর্বের পাহাড়ী অঞ্চল ব্যতীত সবটাই ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা জলভূমি আর চরভূমি। ব্রহ্মপুত্র নদ বারবার তার গতি পরিবর্তন করে নতুন নতুন চর তৈরী করে শেরপুরের ভূ প্রকৃতিকে পাল্টে দিয়েছে। এইসব চরভূমিগুলি ধীরে ধীরে বসতি অঞ্চল হয়ে শেরপুর পরগণার মধ্য, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের জনবহুল গ্রাম ও শহর তৈরি করেছে। মোঘল আমলে চর-খাল বিলে পরিপূর্ণ এ অঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র তখন এত চওড়া ও খরস্রোতা ছিলো যে, সেই নদী পার হয়ে শেরপুর পৌঁছতে সময় লাগতো এক প্রহর বা তিন ঘন্টারও ওপর।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় ব্রহ্মপুত্র নদ জামালপুর থেকে শেরপুরের শেরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাকৃতিক নিয়মেই ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ সরে যায় দক্ষিণের দিকে। কালক্রমে ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর পড়ে লছমনপুর, চরপাড়া, চরশেরপুর, মুচারচর, বয়রা, শীতলপুরসহ অনেকগুলো জনপদ ব্রহ্মপুত্র তথা শেরী নদীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে। শেরপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের মৃগী নদী ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকারূপে প্রসারিত ছিলো। পরবর্তীকালের ইচলি বিল এই অববাহিকারই স্তব্ধ ভগ্নাংশ।

বর্তমানে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪২ কি.মি, দীর্ঘ ভারত সীমান্তজুড়ে গাড়ো পাহাড়ের অবস্থান। নদী-খাল-বিল ও পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা শেরপুর এক সময় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সীমার মধ্যে স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছিল। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে শহর থেকেই উত্তর আকাশে গাঢ় নীল রঙে আঁকা পাহাড়ের রেখা এখনো দেখা যায়। এখনও শহর থেকে বের হয়ে উত্তর সীমান্তে অগ্রসর হতে থাকলে আকাশে পাহাড়ের গাড় নীল আবছায়া স্পষ্ট হতে থাকে। সেটাই গারো পাহাড়।

বার্ষিক গড় তাপমাত্রা

এই জেলার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২° সে. থেকে সর্বোচ্চ ৩৩.৩° সে.। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২১৭৪ মি.মি.।

নদী ও নদ

পুরাতন ব্রহ্মপুত্রঃ জেলার একমাত্র নদ।
প্রধান নদীসমূহ হচ্ছেঃ
কংস
ভোগাই
কর্ণঝরা
চেল্লাখালি
ঝিনাই
দুধদা
মহারশি
মালিঝি
সোমেশ্বরী
মিরগী
দশানি

 

খলং এবং কালাগাঙ এখন মৃত নদী। এছাড়াও আরো অনেক নদী রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ

শেরপুর জেলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষিজ উৎপাদন, সস্তা শ্রম, ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ – এর উপর ভিত্তি করে শেরপুর জেলাকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত করা যেতে পারে। জেলার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলে পাওয়া যায় অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ পাথর, সাদা মাটি , নুড়ি ও সিলিকা বালি ।

ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ভূ-তত্ত্ব জরিপ দপ্তর (জিএসবি) এক জরিপ চালিয়ে এখানে পর্যাপ্ত পরিমানে সাদা মাটির মজুদ পায়। শেরপুরের পাহাড়ী অঞ্চলসমূহে এ শিল্পের পর্যাপ্ত কাঁচামাল অর্থাৎ কেত্তলিন জাতীয় সাদা মাটির বিপুল পরিমাণ মজুদ রয়েছে। ১৯৯০ সালের ভু-জরিপ মতে শেরপুর জেলার পাহাড়ী এলাকায় সাদা মাটির সন্ধান মেলে। যার দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২ মিটার লেন্স আকারে ছড়ানো। মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার টনের মতো। এ মাটি সাধারণত দেখতে হালকা ধূসর বর্ণের, কিছুটা হালকা বাদামী- সাদা বর্ণের। এতে এ্যালুমিনিয়াম (হি-২.৩) পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৩০ভাগ। অনুরুপ সাদামাটি ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা গজনী এবং পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলেও বিদ্যমান।

জনবসতি

অধিকাংশই বাঙালী মুসলিম। এছাড়া বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলী এবং কিছু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলী রয়েছেন।

আদিবাসী

বর্তমান শেরপুর জেলার উত্তর সীমান্তের গারো পাহাড় ও তার প্বার্শবর্তী সমতল এলাকায় কোচ,গারো,হাজং, ডালু, বানাই এবং রাজবংশী ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন কোচ, গারো প্রভৃতি নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।

প্রধান ফসল

ধান, পাট, গম, সরিষা, আলু, বাদাম, আখ এবং তরিতরকারী এই জেলার প্রধান ফসল।

অর্থনীতি

শেরপুরের অর্থনীতি প্রধানত কৃষিভিত্তিক, যদিও অকৃষি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। জেলার বিভিন্নরকম ফসল উৎপাদিত হয় যেমন স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, ডাল, বিভিন্নরকম শাকসবজি, তামাক এবং অন্যান্য। কলা, আম, জাম, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, কাঁঠাল, তাল, জাম্বুরা, বেল, পেঁপে, বড়ই, কামরাঙ্গা, আতাফল ইত্যাদি বিভিন্ন ফল চাষ করা হয়।

দেশের অন্যান্য অংশের মতো এই জেলায়ও বিভিন্ন জাতের মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। নদী, উপনদী চ্যানেল এবং খাঁড়ি থেকে বিভন্ন প্রকার মাছ ধরা হয়।জনপ্রিয় স্বাদুপানির মাছ হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউস, চিতল, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাস, গজাড়, শোল, পাবদা, কই, শিং, ফালি, বেলে, টেংরা ইত্যাদি। এছাড়াও সদ্য পরিচিত বিদেশী বিভিন্নরকম মাছ হচ্ছে তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ইত্যাদি।

এছাড়াও ফসল, গৃহপালিত পশু ও মৎস্য পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। অকৃষি কর্মকান্ডেও জেলার অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে বহুলাংশে ধানের চাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কুঁড়া, তুষ সহ অনেক ছোট ছোট শিল্পের যোগান ও পরিবহন খাতের গ্রাহক হয়ে সাহায্য করছে এইসব চাতাল। এ অঞ্চেলর পাহাড়ে লাল বনমোরগ ও বিভিন্ন প্রাণী পাওয়া যায়।

সূত্রঃ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও উইকিপিডিয়া ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *