শেরপুর জেলার গর্ব প্রফেসর ডাঃ সোহরাব আলী

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ

ডাঃ সোহরাব আলী স্যার বাংলাদেশের মধ্যে এক মাত্র বায়োকেমিস্ট্রিতে ডিএসসি ডিগ্রি অর্জনকারী ও সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের সনদ পুড়িয়ে ফেলা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি ১৯৪৪ সালের ১৬ই জুন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার চক পাঠাকাটা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

🔹 ১৯৬০ সালে তৎকালীন সময়ের নামকরা পিয়ারপুর হাইস্কুল থেকে তিনি অংকে লেটার সহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন (বর্তমান এস এস সি) পরীক্ষা পাশ করেন।
🔹 ১৯৬২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই এস সি (বর্তমানএইচএসসি) পরীক্ষা পাশ করেন।
🔹১৯৬৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী অর্জন করেন।
🔹 ১৯৭৩ সালে আই পি জি এম আর ( পিজি) থেকে বায়োক্যামিস্ট্রিতে এম.ফিল(স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী অর্জন করেন।
🔹১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জনস ( বিসিপিএস) থেকে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন।
🔹২০০৪ সালে শ্রীলংকার কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Lead Poisoning নিয়ে কাজ করে সর্বোচ্চ ডিগ্রী Doctor of Science (D. Sc) অর্জন করেন।বর্তমানে তিনি মেডিকেল সাইন্সে বাংলাদেশের একমাত্র D.Sc ডিগ্রী অর্জনকারী ব্যাক্তি।
🔹আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ইলিশ মাছের চর্বি খাইয়ে মানুষের উপর গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন যে এটা রক্তের কোলেস্টেরল কমানো সহ বিভিন্ন ভাবে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। পেশাগত জীবনে তিনি লিপিড মেটাবলিজম ও পুষ্টি বিষয়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
🔹৫০ বছর যাবৎ বায়োকেমিস্ট্রিতে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অনেক দেশি, বিদেশি মেডিকেল গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং প্রতিষ্ঠানের সদস্য হয়েছেন। এ পর্যন্ত তাঁর ৯৫টি গবেষণা প্রতিবেদন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
🔹 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের এবং পরবর্তীতে বিএসএমএমইউ এর ছাত্র-ছাত্রীদের ২০ বছর যাবৎ এম.ফিল, এম.ডি, এমএস এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রির থিসিস তত্বাবধান করেছেন।
🔹 এক জরিপে তিনি বিশ্বের “একশত শিক্ষকের একজন” নির্বাচিত হন।
🔹২০০৬ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউটে তিনি বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিবন্ধিত হন।
🔹 ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টারে (ক্যামব্রিজ,ইংল্যান্ড) ম্যান অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হন।
🔹১৯৭৭-৭৮সালে বি.এম.এ য়ের সভাপতি ছিলেন।
🔹 (১৯৯৫-৯৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টগ্রাজুয়েট চিকিৎসা অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
🔹 ১৯৯৯-২০০৪ সাল পর্যন্ত (পিএসসি)বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন।
🔹 তিনি জীবনের দীর্ঘতম সময়(৩০বছর) একই প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ আইপিজিএমআর (পিজি হাসপাতাল) এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। অত্র বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৫ সালে জুন মাসে অবসর গ্রহন করেন।
🔹 একবছর (১৯৭৯-১৯৮০) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ডব্লিউ.এইচ. ও ফেলোশিপ ইন ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, বারমা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া অন ক্লিনিক্যাল বায়োক্যামিস্ট্রি, মেডিকেল এডুকেশন এন্ড নিউট্রিশন।
🔹১৯৮৪ ব্রিটিশ কাউন্সিল বার্সারী ইন রয়েল ইনফার্মারী,গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য অন প্যাথলজিক্যাল বায়োক্যামিস্ট্রি।
🔹 ১৯৯৭ সিয়েম কনফারেন্স স্পনসারড বাই ডব্লিউএইচও ইন পাতায়া সেন্টার, থাইল্যান্ড অন টিচিং ম্যাথডোলজি।
🔹১৯৯৭ ক্লিনিক্যাল বায়োক্যামিস্ট্রি কনফারেন্স, কলকাতা,ইন্ডিয়া অন কনসেপ্ট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন।
🔹১৯৯৮ ল্যাবরেটরি ইকুয়ুপমেন্ট অপারেশনাল ট্রেনিং স্পনসারড বাই টেকনিকন সিঙ্গাপুর অন অটো এনালাইজার টেকনিক।
🔹১৯৯৮-১৯৯৯,এক্সটারনাল এক্সামিনার ইন ক্যামিক্যাল প্যাথলজি ফর এফসিপিএস এক্সামিনেশন,পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স এন্ড সার্জনস এট করাচি এন্ড লাহোর।
🔹২০০০-চাইনিজ কনগ্রেস অব ক্লিনিক্যাল ক্যামিস্ট্রি এন্ড ল্যাবরেটরি মেডিসিন,হংকং কনভেনশন সেন্টার,হংকং অন Arsenic Poisoning ।
🔹 ২০০১ অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজিস্টস কনফারেন্স, সাইন্স সিটি, কলকাতা,ইন্ডিয়া ।
মোট ৯৫ টি রাষ্ট্রে তিনি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধা ডাঃ সোহরাব আলী

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ডাক্তারদের নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধা-কমান্ডার ডাঃ কলিমুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকায় বিভিন্ন স্পটে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ডাঃ সোহরাব আলী। সেই সময়ে বেশ কয়জন ডাক্তারকে মুক্তিযুদ্ধের সনদ প্রদান করা হয়, তাদের মধ্যে ডাঃ সোহরাব আলী সনদ পান। ১৬ ইডিসেম্বর ১৯৭১ সালের ভোররাতে শাহাবাগের পাশে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে খন্ডযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয়ী বেশে তখনকার রেডিও পাকিস্তান ভবনের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আসেন ডাঃ সোহরাব আলী। ইতিমধ্যে ঐ দিন সকালেই বেতারে আমাদের বিজয়ের ঘোষণা আসে পাকসেনাবাহিনীর আত্নসমর্পনের খবরের মাধ্যমে।

স্বাধীনতার পর তিনি দেখেন তৎকালীন জনৈক আওয়ামীলীগ নেতা বেশ কয়জনের মাঝে মুক্তিযুদ্ধা সনদ বিতরন করেন।যাদের কিছুসংখ্যক ছিল Sixteenth Division মুক্তিযোদ্ধা অর্থাৎ তারা ছিল মূলত রাজাকার। কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে 303 Rifle জমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে যায়। এই সনদ নিয়েই তাদের দুজন ’৭৩ ব্যাচের ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পায়। ওরা ডাঃ সোহরাব আলীর বাসার কাছাকাছি এলাকায় থাকতো।তখন ডাঃ সোহরাব আলী ক্ষোভে দু:খে বলেন, “হায় কপাল! আমরা যুদ্ধ করে সনদ পেলাম অন্যরা যুদ্ধ ছাড়াই সনদ নিয়ে এলো।” তখন তিনি রাগে মুক্তিযুদ্ধের সনদ পুড়ে ফেলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন আমি যোদ্ধা হিসেবে বেঁচে থাকতে চাইনা-চাই ডাঃ সোহরাব আলী হিসেবে বাঁচতে। তিনি বলেন,” মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে যেহেতু নকল ঢুকেছে সেহেতু আসল সার্টিফিকেট নিয়েই লাভ কী? তাই, আজীবন আমি শুধু ডাঃ সোহরাব আলী হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই। “তিনি বলেন, দোয়া করেন আমি যেন সেবা দিয়ে মানুষের পাশে থেকে মৃত্যুবরণ করতে পারি।

প্রস্ফুটিত শেরপুর গ্রুপের পক্ষ থেকে রইল এই গুনি ব্যাক্তির জন্য শুভ কামনা। ছবি ও লেখা প্রফেসর ডাঃ সোরহাব আলী স্যারের অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *